লুসির প্রভুভক্তি  

লুসি নামে আমার দাদার একটি অ্যালসেইশান কুকুর ছিল। ফরিদপুরের  (তৎকালীন) রাজবাড়ী মহকুমায় রেলওয়ে অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন এক বিদেশী দাদাকে উপহার দিয়েছিল বেবি লুসিকে। রিটায়ার করার পর দাদা লুসিসহ গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের করটিয়ায় চলে এলেন। এটি ছিল ছয় বিঘার বাগান বাড়ি। লুসি দিনের বেলায় সাধারণত শেকলবন্দী থাকতো, রাতে তাকে ছেড়ে দেয়া হত বাড়ি পাহারা দেবার জন্য। লুসি ছিল দাদার ছায়াসঙ্গী। উনি যেখানে যেতেন লুসিও সেখানে যেত। বাড়িতে, বাইরে হাঁটাহাঁটির সময় লুসি চুপচাপ পাশে হাটতো। প্রয়োজনীয় সব নির্দেশনা লুসি বুঝতে পারতো। ছেলেরা চাকুরি নিয়ে করটিয়ার বাইরে, একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং, দাদি এবং লুসিকে নিয়েই তখন দাদার সংসার। দাদার সব গল্পের মনযোগী শ্রোতাও লুসি। লুসি তখন পরিবারের একজন।

১৯৬৯ সালের জুন মাসের ৯ তারিখে মধ্যরাতে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে দাদা মারা যান। লুসি বিল্ডিং–এর বাইরে, বাড়ি পাহারায় ব্যস্ত। ভোরবেলা যখন লোকজন আসতে শুরু করলো, দাদাকে বাইরে বারান্দায় এনে শোয়ানো হল তখন লুসি বুঝতে পারলো তার মনিব নেই। সে দাদার বেডরুমে ঢুকে যে খাটে দাদা মারা গেছেন সেটার নিচে শুয়ে পড়ল। তাকে আর কিছুতেই সেখান থেকে বের করা গেল না, কিছু খাওয়ানো গেল না। তার কাছে যাবার চেষ্টা করলে সে ভয়ংকর ভাবে ঘেউ  ঘেউ করতো। তার মনিব দুনিয়ায় নেই এটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। সাত দিন পর লুসি মারা যায়, খাটের নিচে শুয়ে থাকা অবস্থায়।

বিঃ দ্রঃ লুসির কাহিনী আমার বাবার কাছ থেকে শোনা।

Leave a Reply