আপনার জব সিকিউরিটি কে দেবে?

এ বছর জানুয়ারি মাসের কথা। দেশে গিয়েছিলাম। করটিয়াতে ছিলাম সেই সময়টায়। একদিন সকালে আমাদের স্কুলের আবাসিক টিচারদের একজন খুবই মন খারাপ চেহারা নিয়ে কাছে এলো।

‘স্যার একটি সংবাদ আছে।’

~বলো।

‘আমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদে চাকরি পেয়েছি।’

~অভিনন্দন। এটাতো খুবই ভালো খবর।

‘কিন্তু স্যার আমার মন খুবই খারাপ। আমি এই স্কুল ছেড়ে যেতে চাই না।’ বলে সে কাঁদতে লাগল। আমি পাশে গিয়ে কাঁধে হাত রাখলাম। টিচারটির নাম আবুল কাশেম। আমি জীবনে যে কয়জন মানুষ দেখেছি, যারা একই সাথে ভীষণ মেধাবি, সৎ এবং কর্মঠ, কাশেম তাদের একজন। সে চলে গেলে আমাদের সবারই খুব খারাপ লাগবে। বললাম, তাহলে যেও না।

‘কিন্তু স্যার, বাবা রাজি হচ্ছেন না। কাল রাতে যখন আমি আমার ইচ্ছার কথা বললাম উনি বললেন, এটা সরকারি চাকরি; জব সিকিউরিটি অনেক ভালো। আমি চাই তুমি এখানে জয়েন করো।’

পরের মাসে জব সিকিউরিটি নিয়ে কাশেম চলে গেল। ওর ক্লাসের বাচ্চারা হাউমাউ করে কান্নাকাটি করলো ওর জন্য। আমি, আমরা একজন সদাত্মা, মেধাবী সহকর্মী হারালাম।

চাকরিজীবীদের জন্য ‘জব সিকিউরিটি’ সম্ভবত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশে গত ২৩ বছর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে কর্মরত প্রায় হাজার দশেক কর্মকর্তা, কর্মচারীর সাথে সফট স্কিলস বিষয়ক কাজ করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, সব প্রতিষ্ঠানেই একটি অংশ সব সময় জব সিকিউরিটি নিয়ে শঙ্কায় থাকেন। সরকারি চাকরি নিয়ে একটা রিল্যাক্সড ভাব সবার মধ্যে কাজ করে, একবার জয়েন করতে পারলে আর চিন্তা নেই। সরকারি চাকরি সহজে যায় না। কিন্তু প্রাইভেট সার্ভিসের বেলাতে চিন্তা এবং চিত্র ভিন্ন। সেই কারণেই ভয়টা সেখানে বেশি কাজ করে।

তবে এই চিত্র বিশ্বব্যাপী; ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডেও এখন দেখছি, চাকুরী নিরাপত্তা নিয়ে এরাও ভীষণভাবে চিন্তিত এবং সদা সতর্ক থাকে।

আমার লেখার টাইটেলের প্রশ্নটিতে ফেরত যাই, তাহলে আপনার জবের সিকিউরিটি কে দেবে? ঠিক ধরেছেন, আপনি নিজেই দেবেন! কিভাবে? আপনার যোগ্যতা, দক্ষতা এবং পরিশ্রম দিয়ে, আর সাথে থাকবে সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা। আপনার যোগ্যতা, দক্ষতা এবং পরিশ্রমকে এমন ইউনিক পর্যায়ে নিয়ে যান যেন সেটা সবার নজর কাড়ে এবং যে প্রতিষ্ঠানে আপনি কাজ করছেন তারা যেন বুঝতে পারে আপনি তাদের জন্য বিরাট আশীর্বাদ।

নিজেকে এমন ভাবে তৈরি করুন এবং তারপর টার্গেটেড মার্কেটে জানান দিন যেন চাকরিই আপনাকে খোঁজে, আপনার চাকরি খুঁজতে না হয়। আমি গ্রামে প্রচুর গ্র্যাজুয়েট দেখেছি যারা ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকার চাকরির জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিন্তু পাচ্ছে না। আবার একই সাথে এইট পাস ইলেকট্রিশিয়ানকে দেখেছি যে দিনে কমপক্ষে ১০০০ টাকা আয় করে এবং তার জব মার্কেটে তার প্রচন্ড ডিমান্ড। রিজিকের মালিক আল্লাহ, কিন্তু মানুষের বেলায় সেই রিজিকটি পাবার জন্য চেষ্টা করতে হবে। আমাদের একটি বড় অংশই অল্প চেষ্টায় হাল ছেড়ে দেয় কিংবা চেষ্টাই করতে চায়না, কিন্তু ফলটা ঠিকই চায়। মহামারীর এই সময় আমাদেরকে আবার ‘সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট’-এর যুগে ফেরত নিয়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষের জবই থাকছে না, তার আবার সিকিউরিটি! সুতরাং নিজের জব সিকিউরিটি নিজে তৈরি করুন। নিজের কোর কম্পিটেন্সি অর্থাৎ বিক্রয়যোগ্য পেশাগত দক্ষতাটি খুঁজে বের করুন, সেটাকে অনবরত শান দিতে থাকুন এবং সেটাই আপনার পায়ের নিচের মাটিকে সিমেন্টের মতো শক্ত করে দেবে, ইনশাআল্লাহ!

Leave a Reply