রায়ান জিয়া বনাম রায়ান গুড

রায়ানকে আজ কনকরডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় রেসিডেন্সি হলে রেখে এলাম। শুরু হল ওর জীবনের ‘একলা চলরে’ পর্ব। ১৯৮৮ সালে আমিও এভাবে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় এসেছিলাম ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে। আমাদের বড় ছেলেটির নাম রায়ান রাখার পেছনে ছোট্ট একটি ঘটনা আছে। ১৯৯৭ সালে দৈনিক ভোরের কাগজে ‘রায়ান গুড’ নামে কানাডিয়ান এক ছেলের গল্প ছাপা হয়। সে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ফসল। ১৯৭২ সালে এক কানাডিয়ান দম্পতি তাকে ঢাকা থেকে দত্তক নিয়ে এসে তাদের অন্য দুই সন্তানের সাথে নিজের সন্তানের মত মানুষ করে। ছেলেটির ২৫তম জন্মদিনে তার বাবা-মা তাকে জানায় সে তাদের নিজের সন্তান না। দত্তক মা তাকে বলে, ‘সত্য জানাটা তোমার অধিকার, তাই তোমাকে আমরা এটা জানালাম কিন্তু এটাও জেনে রেখো, আমিই তোমার মা এবং তুমি আমাদের ছেড়ে চলে গেলে আমি কষ্টে মারা যাব।’  ছেলেটি ধাক্কা সামলে বলে, ‘আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাব না। আমাকে শুধু একবার জন্মভূমিতে যেতে দাও। আমি বাংলাদেশ দেখতে চাই এবং মার কবর খুজে বের করতে চাই।’ ছেলেটি ঢাকায় এসে সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের জানায়, ‘আমি এই দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ফসল। আমি এসেছি দেশটি দেখতে এবং মার কবর খুজে বের করতে। আপনাদের দোয়া চাই।’ রায়ানের গল্পটি আমাকে ভীষণ নাড়া দেয়। ১৯৯৮ সালে যখন আমাদের প্রথম সন্তান হয় তখন ঐ রায়ানকে সন্মান জানিয়ে আমাদের সন্তানের নাম রাখা হয় রায়ান। তখন আমি জানতাম না, এই রায়ানও ইমিগ্র্যান্ট হয়ে একদিন কানাডায় চলে আসবে। গতবছর হঠাৎ মনে হল, রায়ান গুডকে খুজে বের করলে কেমন হয়। জনা তিরিশেক রায়ান গুডকে ইমেইল করলাম। সপ্তাহ খানেক পরে একজন উত্তর দেয়, ‘ইয়েস, ইটস মি!’  দুই রায়ান একে অন্যের সাথে পরিচিত হয়।  তারা এখন ফেসবুক বন্ধু।

রায়ান জিয়া, সৎ, সফল, পরোপকারী মানুষ হও। বাবা হিসেবে এটা আমার দোয়া।

তারপর, মাতৃভূমি বাংলাদেশ এবং দেশটির মানুষের জন্য কাজ করো। বাবা হিসেবে এটা আমার চাওয়া।

Leave a Reply