নিজের এবং সন্তানের সুস্থতা চাইলে বাইরে খাওয়া বন্ধ করুন

আশি এবং নব্বইয়ের দশকে ঢাকার বেইলি রোড পরিচিত ছিল মূলত বইয়ের পাড়া এবং নাটকের পাড়া হিসেবে। আর গত বিশ বছরে এই রোডটি পরিচিত হয়েছে খাবারের পাড়া হিসেবে। তবে এখন ঢাকার সব রাস্তাই খাবারের পাড়া কারণ প্রতি ১০০০ গজ রাস্তার মধ্যে গড়ে দশটা থেকে বিশটা খাবারের দোকান (এবং একটি করে ক্লিনিক)। বেইলি রোডের বই এবং নাটকের আধিপত্য চরমভাবে মার খেয়েছে খাবারের দোকানের কাছে। দোর্দণ্ডপ্রতাপে বেইলি রোডে চলছে খাবারের দোকানের সাম্রাজ্য। সুস্থ বেইলি রোড অসুস্থ হয়ে গেছে। গত বছর নভেম্বরে এক সন্ধ্যায় বেইলি রোডে গিয়েছিলাম এক বড় ভাইয়ের বাসায়। দুই পাশে মাটি থেকে তিন তলা পর্যন্ত শুধু খাবারের দোকান। দুই পাশের ফুটপাত ভরা মানুষ। খাবারের দোকানে যাচ্ছে কিংবা বের হচ্ছে। এই ভয়ঙ্কর জীবন ধ্বংসকারী খাবারের কালচার তথা ফুড হ্যাবিটে আমরা প্রবেশ করেছি গত দুই দশক ধরে মূলত। আর খোঁজ নিলে দেখা যাবে এই দুই দশকে দেশে মানুষ সবথেকে বেশি মানুষ মারা গেছে কিডনির রোগে, লিভারের রোগে এবং ক্যান্সারে, যার প্রধান কারণ বেশি খাওয়া এবং বাইরের খাওয়া। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত বাংলাদেশে মোটামুটি একটি অর্গানিক জীবনযাত্রা ছিল। বাসায় তৈরি খাবার খাওয়া, বাসায় তৈরি নাশতা খাওয়া ইত্যাদি। যেই না ফাস্টফুডের প্রচলন হলো, আমরাও ঝাঁপিয়ে পড়লাম। খাওয়াও বাড়লো, অসুস্থতাও বাড়লো। আর এই দুটোকে পুঁজি করে লাখ লাখ খাবারের দোকান আর হাজার হাজার ক্লিনিকে দেশ ভরে গেল। আর দুটোতেই চলছে চরম দুই নাম্বারি। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র ধানমন্ডির হোটেলে পাওয়া যায় পচা মাংস, মরা মুরগি আর মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোড, বাবর রোডের ক্লিনিকে পাওয়া যায় সনদহীন ডাক্তার।
এমন অসংখ্য খবর প্রতিনিয়ত প্রকাশিত হচ্ছে? কিন্তু আমরা কি সতর্ক হচ্ছি? বাইরে খাওয়া কমাচ্ছি? গতবছর আমি বাবর রোড একটি সাইনবোর্ড দেখেছি যেখানে লেখা ছিল ‘এখানে পেট খারাপের বিশেষজ্ঞ বসে।’ মোহাম্মদপুরে আমি বিশ বছর থেকেছি। পেট খারাপের ডাক্তারের সাইনবোর্ড আগে দেখেনি। একটি পরিবারের একজনের একটি বড় অসুখ মানে ওই পরিবারের সমস্ত সঞ্চয় হয়তো চিকিৎসার খরচে শেষ। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে বাঁচাতে চাইলে বাইরের খাবার মুক্ত থাকুন। বাসায় বানানো খাবার খান যতটা সম্ভব।
এক গ্লাস কোমল পানিয়তে দশ চামচ চিনি থাকে, আর বিশ্বময় চিনির নতুন নাম হচ্ছে সাদা বিষ! যারা ফেসবুকে অনবরত প্রতিদিনের জীবনের বাইরে খাওয়ার বিভিন্ন খাবারের দোকানের ছবি দিয়ে যাচ্ছেন তারা শুধু নিজেদেরই ক্ষতি করছেন না, প্রকারান্তরে ওই দোকানের প্রমোট করে অন্যদেরও ক্ষতি করছেন। ‌ আমরা যার যার পরিবারকে নিয়ে বাইরে খাবার বিষয়ে সতর্ক হলেই খাবারের দোকান গুলোর এবং ক্লিনিকগুলোর এই নৈরাজ্য, দুইনাম্বারী বন্ধ হবে। আমরাও বাঁচব এবং দেশও বাঁচবে।

Leave a Reply