P for ‘Policy’ NOT ‘Problem’!

গত পরশু ওয়েস্ট এডমন্টন মলে গিয়েছিলাম। এটি গোটা আমেরিকা এবং কানাডাতে সবথেকে বড় শপিং মল। পৃথিবীর সব নামী দামী ব্র্যান্ডের শো রুম আছে এখানে। কানাডার নিয়ম হল এখানকার মানুষরা সামারের সময় ফল সিজনের পোশাক কেনে আর ফলের সময় উইন্টারের পোশাক কেনে। আমরা এসে শরতের পোশাক কিনেছিলাম আর এখন শীতের পোশাক কেনার পালা। ঘুরে ঘুরে এক পর্যায়ে স্পোর্টস চেক নামক একটি পোশাকের দোকানে ঢুকলাম, এটি কানাডার একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড শপ। কানাডার সব পোশাকের দোকানেই সারা বছর জুড়ে একটি অংশে সেল চলতে থাকে। সেলের অংশে একটি চমৎকার জ্যাকেট পেয়ে গেলাম যা ‘-৩০’ ডিগ্রী তাপমাত্রার জন্য উপযুক্ত এবং ৩০০ ডলারের জ্যাকেটটি  ১৮০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। জ্যাকেটটি নিয়ে কাউন্টারে গেলাম পে করতে। ক্রেডিট কার্ড বের করতেই সেলস এজেন্ট মেয়েটি বলল, “তোমার একটি ফটো আইডি দেখাও।” আমি মানিব্যাগ থেকে আমার পিআর কার্ডের একটি রঙ্গিন ফটোকপি বের করে দেখালাম। ফটোকপি দেখে সে একটু দ্বিধান্বিত, ওয়াকিটকি দিয়ে সে তার সুপারভাইজারকে ডাকল। এই ফাঁকে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম “আমরা প্রায় তিন মাস ধরে কানাডায় আছি, এই সময়টায় আমি ওয়ালমার্ট সহ অনেক জায়গায় ক্রেডিট কার্ড ব্যাবহার করেছি, কেউ ফটো আইডি দেখতে চায় নি, তুমি চাচ্ছ কেন?” উত্তরে সে একটু ভাবের সাথে বলল, “দ্যাটস ওয়ালমার্ট’স প্রবলেম”। আমি চুপ করে রইলাম। কয়েক সেকেন্ড পরেই সুপারভাইজার এসে দাঁড়াল, আইডি দেখল এবং বলল, ঠিক আছে। আমি ঠিক আগের প্রশ্নটি এবার সুপারভাইজারকে করলাম। সে একটি চমতকার হাসি দিয়ে বলল, “এটা আমাদের পলিসি”। আমিও হাসিমুখে বললাম, “পলিসি শব্দটিই শুনতে চাচ্ছিলাম, প্রবলেম নয়”। বাসার ফিরে সন্ধ্যায় স্পোর্টস চেকের হেড অফিসে মেইল করে বিকেলের ঘটনাটি জানালাম। ঢাকায় আমি কয়েক হাজার সেলস অফিসারকে “হাউ টু উইন  ওভার কাস্টমার” ট্রেইনিং করিয়েছি, একজন সেলস অফিসার কখনোই তার কাস্টমারকে “দ্যাটস দেয়ার প্রবলেম” বলতে পারে না, বিশেষ করে পৃথিবীর সেরা পাঁচটি  দেশের একটিতে তো নয়ই। এই চিন্তা থেকেই ভাবলাম ওদের জানাই। আজ সকালে ওদের হেড অফিস থেকে মিস মেগান ওয়েবার আমাকে মেইল করে বিশেষ ভাবে দুঃখ প্রকাশ করল এবং বলল, “তুমি যদি আমাকে জানাও এটা কোন ব্র্যাঞ্চে হয়েছে তাহলে আমি সেই ব্র্যাঞ্চের এসজিএম, ডিএম এবং এভিপি অপারেশন্স কে ব্যাপারটা জানাব।” আমি জানালাম। আজ সন্ধ্যায় ওয়েস্ট এডমন্টনের স্পোর্টস চেকের ম্যানেজার মিঃ অন্দ্রে ফোন করে জিজ্ঞেস করল, “আমি কি তোমার সাথে এক মিনিট কথা বলতে পারি?” হ্যাঁ বলার পর বলল, “আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ক্ষমা চাচ্ছি সেলস এজেন্টের ‘প্রবলেম’ শব্দটি বলার জন্য এবং আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি এই সেলস এজেন্টসহ আমার ব্র্যাঞ্চের কেউ কখনো এই শব্দটি ব্যাবহার করবে না। সুপারভাইজার জশ যেমন তোমাকে পলিসি শব্দটি বলেছে, সেটিই সবাই ব্যাবহার করবে, কারণ এটাই আমাদের শব্দ। আমি খুব খুশি হব তুমি যদি এটা ভুলে গিয়ে আবার আমাদের ব্র্যাঞ্চ ভিজিট কর”। আমি তাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ দিয়ে ফোন রেখে দিলাম। একেই বলে সেলসম্যানশিপ!

Leave a Reply