একজন প্রিয় মানুষ এবং একটি চাওয়া

২০০০ সালের ঘটনা। সিরাজগঞ্জের একটি ছেলে ২০ বছর বয়সে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় বধির হয়ে গেল। হটাত করে তার চারদিকের পৃথিবী পুরোপুরি নীরব। কথা বলতে পারে কিন্তু কিছু শুনতে পায় না। মাকে শুনতে পায়না, বন্ধুদের শুনতে পায়না, প্রিয় গান শুনতে পায়না। বাবা-মার একমাত্র ছেলে। ওদের পাগল হয়ে যাবার দশা। মেধাবী ছেলেটিকে ঘিরে স্বল্প আয়ের বাবার কত স্বপ্ন ছিল! সবার মাথা খারাপ হয়ে গেলেও ছেলেটি মাথা ঠিক রাখলো। মাকে বললো, তোমাদের স্বপ্ন আমি পুরন করবো। ভর্তি হল কুষ্টিয়া ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং–এ। ক্লাশে হোয়াইট বোর্ডে টিচারের লেখা এবং পাশে বসা সহপাঠীর খাতা থেকে নোট নিয়ে ক্লাশের দ্বিতীয় সেরা ছাত্র হিসেবে অনার্স পাশ করলো। এখন সে সার্টিফায়েড ইঞ্জিনিয়ার, ২০০৭ সাল থেকে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকুরি করে, একটি ইংরেজি দৈনিকে আইটি সহ সমসাময়িক বিষয়ে নিয়মিত কলাম লেখে।
আপনি আপনার শরীর নন, আপনি আপনার মন। সুখের বাস, সফলতার বাস আপনার মনে, শরীরে নয়। সুস্থ শরীর, শিক্ষা সমৃদ্ধ মস্তিষ্ক থাকার পরও সফলতার দরজায় পৌঁছাতে না পারার দায় আমাদের, সৃষ্টিকর্তার নয়।
বি. দ্র. ছেলেটির ডাকনাম কামরুল। আমার জীবনের হিরোদের একজন সে। ওর সাথে পরিচয় ২০০৬ সালে চট্টগ্রামে একটি ট্রেনিং –এ। ওদের ২২ জন কে দুসপ্তাহের একটি ট্রেনিং করাতে চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম। প্রথম দিন ট্রেনিং শেষে সে আমাকে বলল, ‘আমি কি আপনার সাথে কিছুক্ষন হাঁটতে পারি?’ শুরু হয়ে গেল আমাদের দুজনের বাকি জীবনের একসাথে হাঁটাহাটি।
অনেকদিন পর আজ সন্ধ্যা পুরোটা গান শুনে কাটালাম। হটাত মনে পড়লো, ২০০৮ সালে একদিন সন্ধ্যায় আমার বাসায় আড্ডা দেয়ার সময় কামরুল জিজ্ঞেস করেছিলো, (আমরা তখন প্রতি মাসে/দুমাসে একটি সন্ধ্যা একসাথে কাটাতাম) ‘জিয়া ভাই, আমার প্রিয় গানগুলো গত আট বছর ধরে শুনতে পাইনা। কবে পাবো বলতে পারেন?’

ভাই কামরুল, আমিও সেই দিনটির অপেক্ষায় আছি। দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবার আগে যে জিনিসগুলো দেখে যেতে চাই, এটি তার একটি। পরম করুণাময় কবুল করুন। আমীন!

Leave a Reply