বিশ্বকাপে আমাদের পতাকা

আমার ক্লাসে একজন ব্রাজিলিয়ান স্টুডেন্ট আছে। ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম বাংলাদেশের নাম শুনেছে কিনা। শোনে নাই। তারপর যখন বললাম আমাদের দেশে কমপক্ষে ১০ মিলিয়ন ক্রেজি সাপোর্টার আছে ব্রাজিলের, সে তো মহা অবাক। অবশ্যই সে ব্রাজিল নিয়ে গর্বিত কিন্তু গত দুমাসে ফুটবল নিয়ে আলোচনার সময় কোন উন্মাদনা দেখিনি ওর মধ্যে। উন্মাদনা সব আমাদের মাঝে যাদের নামও শোনেনি ব্রাজিলিয়ানরা। আমরা আস্ত বাড়ি ব্রাজিলের পতাকার রং-এ সাজাই, কয়েক কিলোমিটার ব্রাজিলের পতাকা বানাই, ব্রাজিলের জার্সি পরে, পতাকা নিয়ে বিশাল মোটর সাইকেল মিছিল করি, আরও কত কি। আর্জেন্টিনার পতাকা নিয়েও একই মাতামাতি। এই পতাকা প্রেম যদি নিজের দেশের পতাকার প্রতি থাকতো, এই উন্মাদনা যদি নিজের দেশের ফুটবলের জন্য হতো তাহলে আমাদের পতাকাই হয়তো অন্য দেশের মানুষের হাতে হাতে ঘুরত। অন্য দেশের পতাকার পেছনে টাকা খরচ না করে সেই টাকায় নিজ পাড়ার, মহল্লার খুদে ফুটবলারদের নিয়ে একটি ছোট্ট ম্যাচ আয়োজন করা গেলে কতই না আনন্দের হতো! সেটাই হতে পারতো নিজের পতাকাকে সামনে নিয়ে যাবার প্রথম পদক্ষেপ।
বাঙ্গালীর রক্তের মধ্যে মিশে আছে ফুটবল। আবহমান কাল ধরে বাঙ্গালীর খেলা ফুটবল। আমাদের আগের জেনারেশনগুলোর খেলা ছিল ফুটবল। বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জের প্রধান খেলাই ছিল ফুটবল। আমি গ্রামে বড় হয়েছি। রেগুলার ফুটবল না থাকলে আমরা জাম্বুরা দিয়েও ফুটবল খেলেছি। এই অসম্ভব জনপ্রিয় খেলাটি আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে পড়ছে বাংলাদেশে। এটা একটা বিশাল ক্ষতি দেশের জন্য। সাতাশি হাজার গ্রামের মানুষ ফুটবল বোঝে এবং খেলতে পারে। এর মাঝেই লুকিয়ে আছে সত্যিকারের বিশাল সম্ভাবনা। ১২ বছর পরের বিশ্বকাপ কে মাথায় রেখে অনুশীলন শুরু করলে এক কোটি তরুণ পাওয়া যাবে মাঠে নামার মত। সেখান থেকে কি ১১ জন ফুটবলার পাওয়া যাবে না যারা বিশ্বকাপের মাঠ কাঁপাবে? ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা পুরো বিশ্বে নিজেদের পরিচিত করিয়েছে ফুটবল দিয়ে। নিজের দেশে ফুটবল কে তারা প্রায়োরিটি দেয় বলেই ফুটবল নিয়ে তারা এই অবস্থান ধরে রেখেছে।
এখনও সময় আছে আমাদের ফুটবল নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর, হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনার। ফুটবল বোঝে, খেলতে পারে এমন এক কোটি তরুণকে মাঠে নামালে একসময় বিশ্বকাপ মাঠের ১১ জন তৈরি হবেই ইনশা আল্লাহ্‌, তাছাড়া আমাদের আজীবন বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় অন্যের পতাকা নিয়েই লাফাতে হবে।

Leave a Reply