চাকরির স্ট্রেস এবং মুক্তির উপায়

চাকরি যারা করেন, বিশেষ করে বেসরকারি চাকরি যারা করেন, তাদের অন্যতম একটি স্ট্রেস হচ্ছে হঠাৎ করে চাকরি চলে গেলে  সারভাইভ করবেন কিভাবে। সবার বেলাতেই নিশ্চয়ই এটা ঘটে না কিন্তু যাদের বেলাতে এই মানসিক অবস্থার তৈরি হয় তাদের জন্যই এই লেখাটি। পাশাপাশি সঞ্চয়ের পরিমাণ খুব ভালো না হলে সেটা এই স্ট্রেস লেভেলকে আরও একধাপ বাড়িয়ে দেয়। মনে পড়ে ১৯৯৬ সালে যখন ফ্রিল্যান্স ট্রেইনার হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলাম তখন প্রায় প্রত্যেক মাসেই হিসাব করতাম কাজ না থাকলে কয় মাস ঢাকায় টিকে থাকতে পারবো। আলহামদুলিল্লাহ, বিজনেস ইংলিশ প্রাইভেট ওয়ান-টু-ওয়ান কোর্সটা ঢাকায় ক্লিক করে যায়  পেশাজীবীদের মধ্যে। পত্রিকাগুলোরও একটি বড় ভূমিকা ছিল। ২/৩টা বাংলা পত্রিকা তাদের পড়ালেখা পাতায় এই কোর্স বিষয়ে ছোট্ট একটি নিউজ করত প্রতিনিয়ত এবং সেটাই ব্যাপক সাড়া ফেলে ঢাকার বিভিন্ন পেশায় কর্মরত পেশাজীবীদের মধ্যে। আলহামদুলিল্লাহ, এক বছরের মাথায়  ওই স্ট্রেসটা চলে যায় এবং আমি বুঝে যাই ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আমি টিকে থাকতে পারবো। আমার কাজটা করার ক্ষেত্রে আমার কিঞ্চিৎ দক্ষতাটুকু সম্পর্কে আমার পরিষ্কার ধারণা ছিল। আমি জানতাম  কেউ আমার কাছে কোর্স করতে আসলে তাকে আমি ঠিক কতটুকু সাহায্য করতে পারব তার পেশাগত জীবনে উৎকর্ষতা সাধনে। এই জানতে পারা, বুঝতে পারাটুকু আমার নিজের পেশার পথটাকে মসৃণ করে দেয়; আমাকে প্রত্যয়ী করে তোলে। এই প্রত্যয়, কিঞ্চিৎ দক্ষতা এবং আল্লাহর রহমতের সমন্বয়ে আস্তে আস্তে দেশের এবং দেশের বাইরের দরজা খুলতে শুরু করে। গ্রাম থেকে আসা একটি ছেলে যে রিকশাওয়ালার সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজে বের করেছিল সে পায়ের নিচে মাটি পেয়ে যায়। আজকের মূল প্রসঙ্গে ফিরে যাই। শুরুতে যে স্ট্রেসের কথা বলেছিলাম সেই স্ট্রেসে যারা ভোগেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, নিজের ‘কোর কম্পিটেন্সি’ অর্থাৎ পেশাগত জীবনে বিক্রয়যোগ্য দক্ষতাকে চিহ্নিত করুন। সেই দক্ষতার বিষয়টিতে  আগামী ছয় মাস প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘন্টা পড়াশুনা করুন, যা শিখছেন সেটা নোটবুকে টুকে রাখুন এবং প্রতি সপ্তাহে আপনার শেখার মানদণ্ড যাচাই করুন। এভাবে ২৪ সপ্তাহ আত্মউন্নয়নের প্রশিক্ষণে নামুন। পাশাপাশি ইংরেজী ভাষায় নিজের দক্ষতাটুকুও একটু শান দিন। এরপর যাদের সাথে কাজ করছেন কিংবা করতে চান তাদের জানতে দিন আপনি কিভাবে তাদের সংস্থায় আরও বেশি অবদান রাখতে পারেন। সেটার প্রমাণ দিন। দেখবেন তারপর আস্তে আস্তে পায়ের নিচের মাটি শক্ত হতে থাকবে, ইনশাল্লাহ। ‘চাকরি না থাকলে কিভাবে চলব’ এই ভয় থেকে তখন বেরিয়ে আসবেন, কারণ চাকরিই তখন আপনাকে খোঁজা শুরু করবে। সারা পৃথিবীতে বিশেষ করে উন্নত বিশ্বে ফ্রীল্যান্স পোটেনশিয়াল লোকজনদের কদর  ভীষণভাবে বেড়ে চলেছে, কারণ উন্নত বিশ্বের চাকরিদাতা কর্তৃপক্ষ এখন স্থায়ী চাকরিজীবীর পরিবর্তে পার্টটাইম কিংবা চুক্তিভিত্তিক চাকরিজীবীদের প্রতি বেশি আগ্রহী, কারণ এতে করে তাদের ওভারহেড খরচ কমে যায়। আপনি বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যেকোন দেশে বসেই পৃথিবীর অন্য আরেকটি দেশের কোন কর্তৃপক্ষের জন্য কাজ করতে পারেন যদি সে চাহিদার জায়গাটুকু থাকে। তবে তার জন্য সবার আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। তাড়াহুড়া করলে চলবে না। এটা ‘টি-টোয়েন্টি’ ম্যাচ না, এটা পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচ। প্রস্তুতিসহ নামতে হবে।

Leave a Reply