স্মার্ট ফোনের কাছে আমাদের আনস্মার্টলি আত্মসমর্পণ!

আপনি কি কখনো লক্ষ্য করেছেন দিনে আপনি কতবার ফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকান? ‘লক ইট’ নামক একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ এই বিষয়ে জরিপ করে দেখেছে মানুষ দিনে গড়ে ১১০ বার ফোন স্ক্রীন চেক করে। ২৪ ঘন্টায় ১৪৪০ মিনিট। ঘুম বাবদ ৮ ঘন্টা অর্থাৎ ৪৮০ মিনিট বাদ, তাহলে রইল ৯৬০ মিনিট। ৯৬০ মিনিটে ১১০ বার অর্থাৎ প্রতি ৮.৭২ মিনিটে গড়ে আমরা একবার ফোনের স্ক্রীনে তাকাই। অবশ্যই এটা সবার বেলায় প্রযোজ্য নয়। কেউ হয়তো আধ ঘন্টায় একবার তাকায় ফোনের দিকে, আবার কেউ হতে প্রতি দুই মিনিটে একবার চোখ রাখে ফোনের স্ক্রীনে। বাংলাদেশে যদি ৮ কোটি মানুষ ফোন ব্যবহার করে, আর তার অর্ধেক যদি স্মার্ট ফোন অর্থাৎ অ্যান্ড্রয়েড ফোন হয় তাহলে তার সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে চার কোটি। আর এই চার কোটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর মধ্যে যদি মাত্র ২৫ শতাংশের বেলায় এই গড়ের হিসাব প্রযোজ্য হয়, তাহলে এক কোটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী প্রতি ৮ মিনিটে ফোনের স্ক্রীনে একবার আগ্রহ নিয়ে তাকাচ্ছে। আমার পয়েন্টটা এখানেই। এই হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড নামক একটি ডিভাইসের ক্ষমতা! এটা কোটি মানুষকে বাধ্য করছে প্রতি ৮/১০ মিনিটে তার দিকে একবার মনোযোগ দিতে, তাও আবার মাথা নিচু করে আগ্রহ সহকারে! রাস্তা-ঘাটে, বাসে-ট্রেনে, হোটেলে, স্টেশনে চারদিকে তাকালেই দেখবেন একটি বড় অংশের মানুষ সবসময় মাথা নিচু করে একটি ডিভাইসের দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষে মানুষে যোগাযোগ কমে গেছে, কথোপকথন কমে গেছে, মানুষ মানুষের সাথে কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। সব আগ্রহ একটি ডিভাইসের দিকে। ২০ বছর আগেও কি এটা আমরা চিন্তা করতে পারতাম? এজন্যই বলা হয়, অ্যাপেল আর ব্ল্যাকবেরি যখন শুধু মাত্রই ফল হিসেবে পরিচিত ছিল, জীবন তখন অনেক সহজ ছিল। এই ভয়ঙ্কর আসক্তি ক্রমশ ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধি তৈরি করছে। মানুষ একদিকে মানবীয় গুণাবলী সম্পন্ন রোবট তৈরি করছে আর অন্যদিকে নিজেরাই মানবীয় গুণাবলী শূন্য হয়ে যাচ্ছে যার অন্যতম কারণ এই ডিভাইস। আমাদের ঘিরে থাকা প্রিয় মুখগুলোর দিকে আগ্রহ নিয়ে দিনে কি আমরা দশবারও তাকাতে পারি কিংবা তাকাই? হয়তো হ্যাঁ, হয়তো না। কিন্তু এই ডিভাইস আমাদের বাধ্য করে দিনে ৫০ থেকে ১০০ বার আগ্রহ নিয়ে তার দিকে তাকাতে এবং তার পেছনে সময় ব্যয় খরচ করতে। দিনে দিনে আসলে আমরাই রোবট হয়ে যাচ্ছি, তাই না? এর কি সমাধান আছে? অবশ্যই আছে! ডিভাইস থেকে যতটা পারুন চোখ সরিয়ে রাখুন এবং মানুষের দিকে তাকান। মানুষের চোখে চোখ রাখুন এবং কথা বলুন। নব্বই দশকের শুরুর দিকে অবস্ কিওর ব্যান্ডের একটি গান ছিলো,
‘মমতায় চেয়ে থাকা সেই চোখ নেই,
তুমি আছো আমি আছি আছে সকলেই।’
আমাদের সব মমতা রোবটকে দিয়ে আমরা মমতা শূন্য হয়ে যাচ্ছি।

Leave a Reply