আমার মা

ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত আমার আম্মাই আমাকে পড়িয়েছেন। কোন গৃহশিক্ষক ছিলনা। আম্মার নিজের পড়াশোনা খুব বেশি দূর না, এইচএসসি পর্যন্ত। কিন্তু আমাকে পড়ানোর বেলায় উনি যথেষ্ট কনফিডেন্ট ছিলেন। প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হবার আগে আম্মা আমাকে বছর দুয়েক বাড়িতে এমন পড়ালেখা করিয়েছিলেন যে স্কুলের হেড টিচার ভর্তির দিন ইন্টারভিউ নিয়ে আমাকে কিছুতেই ক্লাস ওয়ানে নিতে রাজি হলেন না। তার পরামর্শ ছিল ক্লাস ফোরে ভর্তি করার। আব্বা আকাশ থেকে পড়লো। ‘ও জীবনে স্কুলে পড়ে নি, আর একবারে ভর্তি হবে ক্লাস ফোরে? এসব কি বলছেন আপনি!’ হেড টিচারের যুক্তি হলো, ‘আমাদের ক্লাস ফোরের বাচ্চার থেকেও বেশি জানে এই ছেলে। সুতরাং ওর ক্লাস ফোরেই ভর্তি হওয়া উচিত।’ অনেক যুক্তিতর্কের পর আমাকে ক্লাস থ্রিতে ভর্তি করানো হলো। আমার জীবনে ওয়ান-টু নেই। সেই সময়কার বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে অনেকের জীবনই এরকম ওয়ান-টু ছাড়াই শুরু হত। এখনকার মত এত কড়াকড়ি তখন ছিল না। রাতারাতি আমি আমার বয়সি বন্ধুদের থেকে লাফিয়ে দুই ক্লাস উপরে উঠে গেলাম। রীতিমতন অস্বস্তিকর অবস্থা। আব্বা পরের বছর ভুলটা বুঝতে পারলেন। এই ভুলের খেসারত হিসেবে আমাকে ক্লাস ফাইভে দু’বছর এবং ক্লাস এইটে দু’বছর রাখা হলো। ক্লাস ওয়ান-টু না থাকলেও আমার জীবনে ক্লাস ফাইভ এবং এইট ডাবল-ডাবল। করটিয়া পর্ব শেষ করে যখন ঢাকা যাবার সময় হল আম্মার সে কি হাউমাউ কান্না! দুহাতে চোখের পানি মোছেন আর বলেন, ‘আল্লাহ্‌র হাতে ছেড়ে দিলাম!’ শুরু হল জীবনের ‘একলা চলরে’ পর্ব। আমার এবং আমার ছোট ভাইয়ের সৎ ভাবে বেড়ে উঠা এবং সৎ জীবিকার মাধ্যমে জীবন যাপন করার পেছনে মূল ভুমিকাই আম্মার।
আম্মার আজ জন্মদিন। গত তিন বছর এই দিনটাকে মাথায় রেখে দেশে চলে আসি আম্মার সাথে এই বিশেষ দিনটি কাটাব বলে। আমি এবং মেহেদী ছাড়াও এখন আম্মার আরও ২৩ জন সন্তান আছে (আমাদের স্কুলের টিচাররা)। তারাও আম্মাকে ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায় ঘিরে রাখে। আম্মার জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। মানুষের দেহের কোষ এক হাজার বছর বেঁচে থাকার উপযোগী করে তৈরি করা। আমাদের সবার মায়েরা হাজার বছর বেঁচে থাকুন! আমীন!

Leave a Reply