আদব-কায়দা কোথায় শিখবো?

মাস দুয়েক আগে ঢাকার এক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের চেয়ারম্যান ফোন করলেন। ২০০৪ সালে আমাদের বনানী সেন্টারে উনি কমিউনিকেশনের একটি কোর্স করেছিলেন। তখন উনি সম্ভবত পি এইচ ডি করছিলেন। পরবর্তীতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। একজন আলোকিত মানুষ। উনাকে কতটা শিখতে সাহায্য করেছিলাম জানিনা কিন্তু আমি নিজে উনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছিলাম। বাই দ্য ওয়ে, ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত জিয়া’স ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার আমাকে হাজারখানেক আলোকিত মানুষের সংস্পর্শে নিয়ে আসে যাদের কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি, এখনও শিখছি। ২০০৭ সাল থেকে আমি পুরোপুরি কর্পোরেট ট্রেনিং নিয়ে কাজ করতে শুরু করায় প্রাইভেট ওয়ান-টু-ওয়ান কোর্সগুলো কমে যেতে থাকে। ডক্টরেট সাহেবের কথায় ফেরত যাই। প্রায় ১৫ বছর পর আবার আমাদের যোগাযোগ। উনি টেক্সট দিয়ে আগে সময় চাইলেন, তারপর ফোন করেই স্যার স্যার করা শুরু করলেন। আমি বললাম, ভাই, স্যার স্যার কেন করছেন? ২০০৪ সালে কোর্স করার সময় জোর করে স্যার সম্বোধন করতেন সেটা আলাদা কথা। (জোর করে এজন্যে বললাম, আমার কাছে যেসব পেশাজীবীরা প্রাইভেট ওয়ান-টু-ওয়ান কোর্স করতে আসতেন তাদের শুরুতেই বলে দিতাম, আমাকে স্যার সম্বোধন করবেন না, ভাই বলুন। এই হাজারখানেক প্রশিক্ষণার্থীর বেশির ভাগই ছিল বয়সে আমার বড়।) ডক্টরেট সাহেব বললেন, ‘স্যার ওয়ানস্ আ টিচার ইজ অলওয়েজ আ টিচার!’
এই আলোকিত মানুষটি উনার স্বল্পসময়ের একজন শিক্ষককে সন্মানিত করে আসলে নিজেকেই সন্মানিত করলেন। আমার মাথায় এবং বুকে জায়গা করে নিলেন। আমি বাধ্য হলাম আদবকায়দার এই উদাহরণটিকে আমার লেখায় নিয়ে আসতে। এভাবেই আদবকায়দা আমাদের মধ্যে পারষ্পরিক বন্ধনকে শক্ত করতে পারে এবং চারধারের পৃথিবীটাকে একটি চমৎকার বাসযোগ্য জায়গায় পরিণত করতে পারে।
বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বেশী যে জিনিসগুলোর অভাব বোধ হয়; সেগুলো হল, মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসার অভাব, মমতার অভাব এবং আদবকায়দার অভাব। প্রথম দুটি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে অনেক বড় প্রেক্ষিত থেকে আসতে হবে। আজকের এই ছোট্ট আলোচনায় আদবকায়দা নিয়ে একটু কথা বলি। আদবকায়দা মানুষ শিখবে কোথা থেকে? প্রথমত, পরিবার থেকে, বাড়ি থেকে, বাবা-মা থেকে, পরিবারের অন্য সদস্য থেকে। সে কারণেই বলা হয়, বাড়ি হল দুনিয়ার সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বাবা-মা হচ্ছেন সেরা শিক্ষক।
দ্বিতীয়ত, শিখবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে, শিক্ষক থেকে।
এবং তৃতীয়ত, শিখবে তার কর্মজীবন থেকে। এই তিনটি ক্ষেত্রের কোনটি থেকেই যে শিখতে পারেনা সে আসলেই অভাগা। কিন্তু এই অভাগারা একা দায়ী নয় তাদের অবস্থার জন্য। আমরা সবাই দায়ী। আমরা যার যার জীবনে আদবকায়দার চর্চা করলে আমাদের ঘিরে থাকা পরিবার পরিজনের মধ্যে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সঞ্চারিত হবে। সবকিছুর শুরু আসলে বাড়ি থেকে। আমাদের ব্যাক্তিগত, সামাজিক জীবনে আবদকায়দা, সহমর্মিতা, মানুষের প্রতি ভালবাসা কতটা প্রতিফলিত হচ্ছে তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করে কিংবা করবে আমাদের সন্তানেরা কি শিক্ষা, কি মূল্যবোধ নিয়ে বড় হচ্ছে। ভাল থাকবেন সবাই!

Leave a Reply