কয়েক সপ্তাহ পর পবিত্র রমজান মাস শুরু হচ্ছে। ইসলাম ধর্মে পাঁচটি পিলার-এর একটি হচ্ছে যাকাত প্রদান। স্বচ্ছল মুসলমানকে তার অসচ্ছল মুসলমান ভাইয়ের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং এভাবেই সমাজে সাম্যতা বজায় থাকবে। কয়েক বছর আগে পত্রিকায় দেখেছিলাম বাংলাদেশে কমপক্ষে ৫০,০০০ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে যেগুলোতে তার আগের এক বছরের স্থিতি কমপক্ষে এক কোটি টাকা ছিল। তারমানে বলা যায় বাংলাদেশে কমপক্ষে ৫০,০০০ কোটিপতি আছে। এক কোটি টাকায় বছরে যাকাত হয় আড়াই লক্ষ টাকা। ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ৫০,০০০ মানুষ এক কোটি টাকা হিসেবেও যাকাত প্রদান করলে তার পরিমাণ দাঁড়াবে ১২৫০ কোটি টাকা। এই টাকাটি ৪৫০০ ইউনিয়নের স্বল্পআয়ের মানুষদের মধ্যে ভাগ করে দিলে আমরা কি আগামী দুই মাসের আর্থিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারিনা? লক্ষ লক্ষ লাখোপতিদের হিসাবতো এখানে ধরাই হয় নাই। মোটকথা বাংলাদেশের স্বচ্ছল মুসলমান জনগোষ্ঠী যদি প্রতিবছর ঠিকমতো তাদের যাকাত আদায় করে যেটি তাদের জন্য ফরজ, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চেহারা ৪/৫ বছরের মধ্যে এমনিতেই ঘুরে যাবার কথা। গত ১১/১২ বছর গ্রামে কাজ করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, গ্রামের একটি অংশের হাতে বেশ ভালো রকম টাকা পয়সা আছে, বিশেষ করে সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পর্যায়ে। খোঁজ নিলেই দেখবেন গত ১০ বছরে এই ইউনিয়নগুলোতে প্রচুর সংখ্যক চারতালা-পাঁচতালা বাড়ি হয়েছে। ব্যাংকে প্রচুর লোকজনের খুব ভাল অঙ্কের টাকা স্থিতি আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এদের একটি বড় অংশের টাকা আয়ের উৎসের কোন খোঁজ নেই। এরা সরকারকে এক টাকাও ট্যাক্স দেয় না। ধর্মের অবশ্য করনীয় বিধান ‘যাকাত’ তো দেয়ই না। এরা যেটা করে, কোরবানির ঈদের সময় বিরাট একটা গরু কেনে। সেই গরুর গল্প করে এক মাস ধরে আর সেই গরুর গোশ খায় পরবর্তী ১১ মাস ধরে। গ্রামের সব টাকাওয়ালাই এরকম করে সেটা বলছি না কিন্তু একটি অংশ যে ঠিক এই আচরণ করে সেটা আমার মত যারা গ্রামে বড় হয়েছেন কিংবা গ্রামের সাথে এখনো যোগাযোগ আছে তারা ভালো করেই জানেন। এই ভন্ডদের একটি অংশ আবার নিয়মিত মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে, আর পাশাপাশি গ্রামে যত দুই নাম্বারী কাজ আছে সব কিছুর মধ্যেই থাকে। যাকাত দেয়ারতো কোন বালাই নেই। বাংলাদেশ মোটেই গরিব না। গরিব হচ্ছে একশ্রেণীর বকধার্মিক পয়সাওয়ালা ধনীদের মন।