১৯৮৯ সালে আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন আমার বাবা একটি মাঝারি মানের চাকুরি করেন। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস্ কর্পোরেশনের ম্যানেজার। আট কিংবা নয় হাজার টাকা বেতন পান। গাজিপুরে একটি মিলে কর্মরত। আমাকে বললেন, ‘এখন তো বাবা তাহলে আমাদের তিনটা সংসার হয়ে গেল। তুমি ঢাকায়, আমি গাজিপুরে, তোমার ছোট ভাইকে নিয়ে তোমার মা টাঙ্গাইলের করটিয়ায়। তোমাকে আমি মাসে ১২০০ টাকার বেশি দিতে পারবো না।’
আমি বললাম, আব্বা, আমাকে একটা সাইকেল কিনে দেন। ট্রান্সপোর্ট বিল বাঁচবে, আর আমি টিউশানি করে বাকিটা ম্যানেজ করে নেব।
আব্বা তার জমানো টাকা থেকে আমাকে ৫৬০০ টাকা দিয়ে একটা চমৎকার রেসিং সাইকেল কিনে দিলেন; সামনে দুটি গিয়ার, পেছনে ৫টি গিয়ার, চিকন চাকা, ওয়াটার পট, ফোম প্যাড বাঁকানো হ্যান্ডেল, হুলুস্থুল অবস্থা! খুশিতে আমার চোখে পানি।
আজ বাবার মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০১ সালের ২৮ ডিসেম্বর শুক্রবার ভোরে উনি মারা যান দীর্ঘ ৫ মাস লিভার কান্সারে অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করে। উনার ইচ্ছেও ছিল শুক্রবারে আল্লাহ্র কাছে ফেরত যাবার। চলে যাবার মাসখানেক আগে উনি একদিন আমাকে বললেন, ‘বাবা, আমি এবং আমার বাবা কোনদিন হারামের পয়সা, অসৎ আয় করিনি (উনার বাবা রাজবাড়ি জেলার রেলওয়ে অফিসার ছিলেন)। তোমাকে যে আমি ১২০০ টাকা দিতাম সেটা ছিল একশত ভাগ সৎ উপার্জনের টাকা। তোমাদের আহামরি জীবন দিতে পারিনি কিন্তু তোমরা সৎ টাকায় মানুষ হয়েছ এটাই আমার শান্তি, এটাই আমার শক্তি।’ একজন বাবার জন্য এটাই সবচেয়ে বড় শান্তি এবং শক্তি।
পরমকরুণাময়, আমার সৎ বাবাকে আপনি দয়া করে বেহেস্তবাসি করুন। আর আমি চলে যাবার সময় আমার সন্তান তিনটিকেও যেন বুক ফুলিয়ে বলতে পারি ‘তোমাদের সারাজীবন সৎ টাকায় মানুষ করেছি’ সেই তৌফিক দান করুন। আমীন!